অপরা একাদশীঃ
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী ঈশ্বর আরাধনার বিশেষ দিন, যা প্রতি বছর দুটি বার পালিত হয়। এটি প্রথমত বৈশাখ মাসের (বাংলা বঙ্গাব্দ অনুযায়ী) শুক্ল পক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত হয়, যা গ্রেগোরী ক্যালেন্ডারের অনুযায়ী সাধারণত এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে পরে।
অপরা একাদশী দিনে, হিন্দুধর্মীদের অনেকে উপবাস রাখেন এবং ভগবান বিষ্ণুর প্রতি প্রার্থনা এবং পূজা করেন। এই দিনে উপবাস রাখা এবং প্রার্থনা করা বিষ্ণু ভগবানের আশীর্বাদ এবং মুক্তি পেতে সাহায্য করে,আত্মার মোক্ষ প্রাপ্তি অর্জনে ভূমিকা পালন করে। এই একাদশীর অন্যান্য নাম অপর এবং অচলা একাদশী।
অপরা একাদশীর সময় নির্ঘন্ট ও পারণ সময়ঃ
একাদশী আরম্ভঃ
অপরা একাদশী ২০২4 ইং সালের ১লা জুন রোজ শনিবার ( বাংলা ১৪৩১ এর ১৮ জৈষ্ঠ দিবাগত রাত্রি ০৩ টা ৪১ মিনিট থেকে আরম্ভ।
একাদশী উপবাসঃ
অপরা একাদশী ২০২4 ইং সালের ২রা জুন রোজ রবিবার ( বাংলা ১৪৩১ এর ১৯ জৈষ্ঠ দিবাগত রাত্রি ০১ টা ১৭ মিনিট থেকে পর্যন্ত।
একাদশী শেষঃ
অপরা একাদশী ২০২4 ইং সালের ২রা জুন রোজ রবিবার ( বাংলা ১৪৩১ এর ১৯ জৈষ্ঠ দিবাগত রাত্রি ০১ টা ১৭ মিনিট থেকে
পারণ সময়ঃ
একাদশী ব্রত পালন করে আবার নির্দিষ্ট সময়ে তা পারণ করে তার ফল লাভ করতে হয় । তা না হলে ব্রত পালনের শুভ ফল লাভ করা যায় না। অপরা একাদশী ব্রতের পারণ সময় পরদিন ০৩রা জুন রোজ সোমবার সকাল ০৯:২২ হতে ৫:০০পর্যন্ত।
অপরা একাদশীর মাহাত্ম্যঃ
অপরা একাদশী হিন্দু ধর্মের একটি পবিত্র উপবাস ও পুজার দিন। এটি যুগানুযুগী হিন্দু ধর্মের পরাম্পরিক অংশ। অপরা একাদশী বৈশাখ মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী তিথিতে পালিত হয়। একাদশী তিথি প্রতি মাসে দুইবার আসে এবং প্রত্যেকের নিজস্ব মাহাত্ম্য ও সাধনা আছে। অপরা একাদশীর মাহাত্ম্য বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও পুরাণে উল্লেখিত রয়েছে। তার মধ্যে একটি নিম্নরুপ- মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন— হে কৃষ্ণ! জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি এবং তার মাহাত্ম্যই বা কি, আমি শুনতে ইচ্ছা করি। আপনি অনুগ্রহ করে তার মাহাত্ম্যই বা কি, আমি শুনতে ইচ্ছা করি।
আপনি অনুগ্রহ করে তা বর্ণনা করুন। শ্রীকৃষ্ণ বললেন— হে মহারাজ! মানুষের মঙ্গলের জন্য আপনি খুব ভাল প্রশ্ন করেছেন। বহু পুণ্য প্রদানকারীমহাপাপ বিনাশকারী ও পুত্রদানকারী এই একাদশী ‘অপরা’ নামে খ্যাত। এই ব্রত পালনকারী ব্যক্তি জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রুণহত্যা, পরনিন্দা, পরস্ত্রীগমন, মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি গুরুতর পাপ এই ব্রত পালনে নষ্ট হয়ে যায়।যারা মিথ্যাসাক্ষ্যদান করে, ওজন বিষয়ে ছলনা করে, শাস্ত্রের মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রদান করে, জ্যোতিষের মিথ্যাগণনা ও মিথ্যা চিকিৎসায় রত থাকে, তারা সকলেই নরকযাতনা ভোগ করে। এসমস্ত ব্যক্তিরাও যদি এই ব্রত পালন করে, তবে তারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়। ক্ষত্রিয় যদি স্বধর্ম ত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়, তবে সে ঘোরতর নরকগামী হয়। কিন্তু সেও এই ব্রত পালনে মুক্ত হয়ে স্বর্গগতি লাভ করে।
মকররাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাঘ মাসে প্রয়াগ স্নানে যে ফল লাভ হয়; শিবরাত্রিতে কাশীধামে উপবাস করলেযে পুণ্য হয়; গয়াধামে বিষ্ণুপাদপদ্মে পিন্ডদানে যে ফল পাওয়া যায়। সিংহরাশিতে বৃহস্পতির অবস্থানে গৌতমী নদীতে স্নানে, মুম্ভে কেদারনাথ দর্শনে, বদরিকাশ্রম—যাত্রায় ও বদ্রীনারায়ণ সেবায়; সুর্যগ্রহণে কুরক্ষেত্রে স্নানে, হাতি, ঘোড়া, স্বর্ণ তানে এবং দক্ষিণাসহ যজ্ঞ সম্পাদনে যে ফল লাভ হয়, এই ব্রত পালন করলে অনায়াসে সেই সকল ফল লাভ হয়ে থাকে।
এই অপরা ব্রত পাপরূপ বৃক্ষের কুঠার স্বরূপ, পাপরূপ কাষ্ঠের দাবাগ্নির মতো, পাপরূপ অন্ধকারের সূর্যসদৃশ এবং পাপহস্তির সিংহস্বরূপ। এই ব্রত পালন না করে যে ব্যক্তি জীবন ধারণ করে জলে বুদবুদের মতো তাদের জন্ম—মৃত্যুই কেবল সার হয়। অপরা একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণুপূজা করলে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয়। এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণ করলে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়। ব্রহ্মান্ডপুরাণে এই ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।