পতিতালয়ের মাটি ছাড়া মা দুর্গার মূর্তি গড়া হয় না কেন ?

মা দুর্গার মূর্তি গড়া হয় না কারণ সমূহ:

একদিকে পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা, অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই দরকার হয় তথা কথিত ‘অশুচি’, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটির ৷ এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি বিশ্বের। বিভিন্ন দেশে থাকা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শুরু করতে যাচ্ছেন তাদের সবচেয়ে সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গা পূজা। এ উপলক্ষে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা। তবে হিন্দু শাস্ত্র মতে, প্রতিমা তৈরিতে কয়েকটি বিশেষ উপকরণ লাগে। যেগুলি ছাড়া দুর্গা প্রতিমা গড়া সম্ভব নয়।

পবিত্রতার প্রতিমূর্তি ‘মা’ দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে প্রথমেই লাগে বিশেষ কিছু জায়গার মাটি। রাজবাড়ির মাটি, চৌমাথার মাটি, গঙ্গার দুই তীরের মাটি ও ‘অশুচি’ এলাকা বা নিষিদ্ধ পল্লীর মাটি৷ এর সঙ্গে লাগে গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিষ, ‘পবিত্র’ গঙ্গার জল।একদিকে পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা, অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই দরকার হয় তথা কথিত ‘অশুচি’, ‘অপবিত্র’ এলাকার মাটির ৷ এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি ৷

পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা ওঠে তুঙ্গে ৷ কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায় না ৷ মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা ৷ একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি। কিন্তু প্রতিমা নির্মাণের জন্য বেশ্যালয়ের মাটির প্রয়োজন পড়ে। এখানের মাটি ছাড়া মায়ের মূর্তি গড়া সম্ভব নয়। কিন্তু কেন দেবী প্রতিমা নির্মাণের সময় পতিতালয়ের মাটি দরকার হয়, চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তাঁরা নিজেদের অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান।

পতিতালয়ের মাটি ছাড়া মা দুর্গার মূর্তি গড়া হয় না কেন ?
পতিতালয়ের মাটি ছাড়া মা দুর্গার মূর্তি গড়া হয় না কেন ?

দেবী দূর্গার রুপ সমূহ:

ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র ৷ সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি ৷ এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি। নারীর মধ্যেই পুরুষের জন্ম। নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষরাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরীতে পতিতালয়ের মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যাঁরা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সন্মান করতে হবে। নারী কখনো অপবিত্র হতে পারে না এই ধারণাটিই লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে ৷ শরৎকালে হয় দেবীর অকাল বোধন ৷ এই সময় মহামায়া ৯টি রূপে পূজিত হন ৷

দেবী দুর্গার নয়টি রূপ। এগুলি হল- নর্তকী বা অভিনেত্রী, কাপালিক, ধোপানী, নাপিতানী, ব্রাহ্মণী, শূদ্রাণী, গোয়ালিনী, মালিনী ও পতিতা। এই নয়টি রূপকে মায়ের নবকন্যার রূপ বলে হয়। এই নয় গৃহের মাটি ছাড়া মায়ের রূপ নির্মাণ করা যায় না। দেবীর মূর্তি গড়ার জন্য এই নয় শ্রেণীর বাড়ি থেকেই মাটি নিয়ে আসা হয়। অন্যান্য শ্রেণীর নারীর মতো পতিতালয়ের মাটিও এই একই কারণে নিয়ে আসা হয়।

এই নবম রূপটিই আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি ৷ মনে করা হয়, সে কারণেও এই রীতির জন্ম হয়েছে।

আর ও দেখুন:

দূর্গা দেবী কে? কীভাবে তাঁর আবির্ভাব ?

জগদ্ধাত্রী বা দুর্গা হিন্দু শক্তি দেবীর বর্ণনা।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top