মহা শিবরাত্রি কি ? মহা শিবরাত্রি উৎসব পালনের গুরুত্ব ও শিবরাত্রির ব্রতকথার তাৎপর্যতা কি?

মহা শিবরাত্রি :

মহাশিবরাত্রি বা শিবরাত্রি হচ্ছে সনাতন ধর্মালম্বীদের বা  হিন্দু শৈব সম্প্রদায়ের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান। এই মহাশিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। মহাশিবরাত্রি হল হিন্দুধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব ‘শিবের মহা রাত্রি’।অন্ধকার আর অজ্ঞতা দূর করার জন্য এই ব্রত পালিত হয়ে থাকে।অগণিত ভক্ত এইদিন শিবলিঙ্গে গঙ্গাজল, দুধ, বেলপাতা, ফুল দিয়ে পূজা করে থাকে। 

মহা শিবরাত্রি কি ? মহা শিবরাত্রি উৎসব পালনের গুরুত্ব ও শিবরাত্রির ব্রতকথার তাৎপর্যতা কি?
মহা শিবরাত্রির ব্রতকথা

মহা শিবরাত্রি উৎসব পালনের গুরুত্ব :

শিবরাত্রি অর্থাৎ ভগবান শিবের রাত্রি।পৌরানিক মতে এই তিথিতে ভগবান শিবের সাথে পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। এটা ভগবান শিবের আরাধনায় রাত্রি যা ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে পালন করা হয়। অন্য দেবতার পুজো যখন দিনের বেলা করা হয় তখন শিবের পুজো রাত্রে কেন, মনে এই প্রশ্ন জাগতেই পারে। ভগবান শিব তমোগুণ সম্পন্ন বলতে এটা বুঝিয়েছে যে হিন্দু মহাপুরাণ তথা শিবমহাপুরাণ অনুসারে এইরাত্রেই শিব সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তান্ডব নৃত্য করেছিলেন।এর নিগুঢ় অর্থ হল শিব ও শক্তি তথা পুরুষ ও আদিশক্তি বা পরাপ্রকৃতির মিলন। সুতরাং তমোময়ী রাত্রি শিবের পছন্দ। রাত্রি সংহারকালে প্রতিনিধিত্ব করে। কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে চাঁদ সম্পুর্ন রূপে ক্ষীণ থাকে। । আবার এইরাত্রেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ হয়েছিল। জীবের ভিতরে তামসী প্রবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। যেমন জল আসার আগে বাঁধ দিতে হয় সেইরূপ চন্দ্রের ক্ষয় আসার আগে ঐ তামসী প্রভৃত্তি নিবারনের জন্য ভগবান আশুতোষের (শিব) আরাধনা শাস্ত্রকাররা বিধান দিয়েছেন। সংহারের পর নতুন সৃষ্টি অনিবার্য। আপনারা দেখছেন ফাল্গুন মাসে গাছের সব পাতা ঝড়ে গিয়ে নতুন পাতা গজায়। এটা সৃষ্টির নতুন রূপ।সেই লগ্নেই হয় এই উৎসব।

সনাতন ধর্মলম্বীদের  সব ব্রতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হল এই মহাশিবরাত্রি। ব্রতের আগের দিন ভক্তগণ নিরামিষ আহার করে। রাতে বিছানায় না শুয়ে মাটিতে শোয়া হয়। ব্রতের দিন তারা উপবাসী থাকে। তারপর রাত্রিবেলা চার প্রহরে শিবলিঙ্গকে দুধ, দই, ঘৃত, মধু ও গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানো হয়। তারপর বেলপাতা, নীলকন্ঠ ফুল, ধুতুরা, আকন্দ, অপরাজিতা প্রভৃতি ফুল দিয়ে পূজা করা হয়। আর  ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ এই মহামন্ত্র জপ করা হয় । সেদিন রাত্রি জাগরণ করা হয় ও শিবের ব্রতকথা, মন্ত্র আরাধণা করা হয়। ভারতবর্ষের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ তথা সমস্ত শিবমন্দিরে এই পূজা চলে, তান্ত্রিকেরাও এইদিন সিদ্ধিলাভের জন্য বিশেষ সাধনা করে। মহাশিবরাত্রি সাধারণত ইংরাজী মাসের ফেব্রুয়ারি বা মার্চ এ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

এই মহাশিবরাত্রিতে শিব তার প্রতীক লিঙ্গ তথা শিবলিঙ্গ রূপে প্রকাশিত হয়ে জীবের পাপনাশ ও মুক্তির পথ দিয়েছিলেন।

ভিডিও এর মাধ্যমে তথ্য জানতে লিংক এ ক্লিক করুন : http://shorturl.at/rtvG0

মহাশিবরাত্রি ব্রতকথা :

শিবমহাপুরাণ অনুসারে, অতি প্রাচীনকালে বারাণসী তথা কাশীধামে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ বাস করত। সে প্রচুর জীবহত্যা করত। একদিন শিকারে বেরিয়ে তার খুব দেরি হওয়ার ফলে সে জঙ্গলে পথ হারিয়ে রাতে হিংস্র জন্তুর ভয়ে এক গাছের উপর আশ্রয় নেয় । কোনো শিকার না পেয়ে সে হতাশ হয়ে গাছ থেকে একটা করে পাতা ছিঁড়ে নিচে ফেলতে থাকে । সেই গাছটি ছিল বেলগাছ । আর সেই বেলগাছের নিচে একটি শিবলিঙ্গ ছিল। সেদিন ছিল শিবচতুর্দশী অর্থাৎ মহাশিবরাত্রি। আর ব্যাধও ছিল উপবাসী। তার ফেলা বেলপাতাগুলো শিবলিঙ্গের মাথায় পড়ে এর ফলে তার শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হয় তার অজান্তেই। পরদিন ব্যাধ বাড়ী ফিরে এলে তার খাবার সে এক অতিথিকে দিয়ে দেয়। এতে তার ব্রতের পারণ ফল লাভ হয়।

এর কিছুদিন পরে সেই ব্যাধ মারা গেলে যমদূতরা তাকে নিতে আসে। কিন্তু শিবচতুর্দশী ব্রতের ফল লাভ হেতু শিবদূতরা এসে যুদ্ধ করে যমদূতদের হারিয়ে ব্যাধকে নিয়ে যায়। যমরাজ তখন শিকার করেন যে শিবচতুর্দশী ব্রত পালন করে এবং শিব ভক্ত যেই জন, তার উপর যমের কোনো অধিকার থাকেনা। সে মুক্তিলাভ করে। এইভাবে মর্ত্যলোকে শিবচতুর্দশী ব্রতের প্রচার ঘট।

আর ও দেখুন:

হিন্দু বিবাহের প্রতিশ্রুতি এবং শাঁখা সিদুর দান ও বিবাহের মূলমন্ত্র।

হিন্দু শাস্ত্রে বিবাহ রীতির প্রকারভেদ ও এর ব্যাখ্যা।

    Leave a Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top