গঙ্গা পূজা কখন? সব দেবদেবীর পুজা হয় গঙ্গা জলে আর গঙ্গা দেবীর পুজা হয় কোন জলে।

গঙ্গা পূজাঃ

গঙ্গা নদীর মূর্তিস্বরূপ এক হিন্দু দেবী। হিন্দুধর্মে এই দেবী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারিণী। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন গঙ্গায় স্নান করলে সমস্ত পাপ মুছে যায় এবং জীব মুক্তিলাভ করে। গঙ্গা পূজা নবান্ন উৎসবের পর পালন করা হয়, যা চাল শস্যকে উদ্দেশ্য করে। এর তারিখ পরিবর্তনশীল, কিন্তু মার্চ বা এপ্রিল মধ্যে পড়ে। এটি গঙ্গা নদী দেবী বা গঙ্গা, ত্রিপুরার চৌদ্দতমের দেবী একটি উপাসনা। এই উপলক্ষে, ” তিনটি টুকরা বাঁশের মধ্যে সুন্দর ফুল” নিয়ে উপজাতীয় সম্প্রদায়গুলি একটি প্রবাহ বা নদীর তীরে একত্রিত হয় ।

গঙ্গা পূজা কখন? সব দেবদেবীর পুজা হয় গঙ্গা জলে আর গঙ্গা দেবীর পুজা হয় কোন জলে।
গঙ্গা পূজা কখন ? সব দেবদেবীর পুজা হয় গঙ্গা জলে আর গঙ্গা দেবীর পুজা হয় কোন জলে।

পৃথিবীতে অনেক ধর্মালম্বীর মানুষ বাস করে । প্রত্যেক ধর্মে আলাদা আলাদা স্থানের জল বা পানি গুরুত্বপূর্ণ মনে করনে । উদাহরল স্বরুপ ইহুদি ও খৃষ্টানদের কাছে জর্ডন নদীর জল,মুসলিমদের কাছে মক্কার জমজম কূপের জল অত্যন্ত পবিত্র,কিন্তু হিন্দুদের কাছে গঙ্গা নদীর ও গঙ্গাজলের গুরুত্ব অতুলনীয়! হিন্দু অহিন্দু নির্বিশেষে অনেকেই বলে থাকেন যে হিন্দু একটি নির্দিষ্ট ধর্ম নয়,বরং অনেক মত ও পথের সমন্বয় মাত্র। কথাটা সম্পূর্ণ সঠিক নয়।আমার যতটুকু মনে হয়েছে সনাতন হিন্দু ধর্মের ও কতকগুলি সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন যে যে মতাবলম্বী ই হোক না কেন ব্রহ্ম, বেদ,ষড়দর্শন,গীতা (উপনিষদ,বেদান্ত দর্শন ও গীতাকে প্রস্থানত্রয়ী অর্থাৎ এই তিনটি সংসার [পরিবার নয়] থেকে প্রস্থানের জীবের পরম আশ্রয় বলা হয়েছে), রামায়ণ,মহাভারত,গাভী ও গঙ্গা প্রায় সকলের মান্য। আসলে প্রকৃতির বিভিন্ন অংশ,যা আমাদের নানাভাবে উপকার করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশের অপর নাম পূজা।এটা অনেকটাই ভাবমূলক ও প্রতীকী প্রথমদিকে সপ্তসিন্ধু ও পরে ভারতবর্ষের গঙ্গা,যমুনা,গোদাবরী,সরস্বতী,নর্মদা,সিন্ধু ও কাবেরী – এই ৭টি নদীকে পরম পবিত্র বলে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। তবে গঙ্গার স্থান সকলের উপরে! পুরাণে গঙ্গার জয়জয়কার! এমনকি মৃত্যুর অন্তিম মুহূর্তে গঙ্গার (গঙ্গা নারায়ণ ব্রহ্ম) নাম স্মরণ করলে মৃত ব্যক্তি মোক্ষলাভ করেন এরকম বলা হয়েছে।

হিন্দু নবজাতক জন্মের পর আতুরের অবসানে (সুবিধামতো) গঙ্গাস্নান করে শুচি হয় ! আর মৃত্যুর পর গঙ্গায় অন্তোষ্টি ক্রিয়া করতে না পারলে মৃত ব্যক্তির দেহাবশেষ (চিতাভস্ম বা নাভীকুন্ড) আত্মীয় স্বজন গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে আসেন ঐ ব্যক্তি স্বর্গলাভ করবেন এই বিশ্বাসে! এইভাবে হিন্দুর জন্ম থেকে মৃত্যু গঙ্গার সঙ্গে জড়িয়ে আছে! শঙ্করাচার্যের মতো অদ্বৈতবাদী দার্শনিক “দেবী সুরেস্বরী ভগবতী গঙ্গে ….”-বলে গঙ্গার স্তব করেছেন! রবীন্দ্রনাথ জাতীয় সংগীতে গঙ্গার উল্লেখ করেছেন! দ্বিজেন্দ্রলাল তো “পতিতোদ্ধারিনী গঙ্গে …. ” এক অসাধারণ গান লিখেছেন। আর আপনার প্রশ্নের উত্তরে জানাই গঙ্গা সহ সব দেবদেবীর পূজা গঙ্গা জলে হয় একথা আংশিক সত্য।কারণ প্রথমত,শুধু গঙ্গার জলে নয় আচমন মন্ত্রে ঐ সাতটি নদীর জলে মানসিক ভাবে ও বাস্তবে যেকোনো নদী,প্রতিষ্ঠিত পুকুর বা জলাশয় বা কূপের বিশুদ্ধ জলেই পূজা হয়। আর শুধু পূজা নয় হিন্দুর যেকোনো নিত্য,নৈমিত্তিক ও কাম্য কর্মে গঙ্গাজলের প্রয়োজন হয়। শ্রাদ্ধে গঙ্গার স্থান কতখানি যেকোনো শ্রাদ্ধবাসরে বসে দেখবেন। আমরাও জানি গঙ্গা একটা Inanimate object এবং তার ঈশ্বরের স্থান পাওয়া উচিত নয়! গঙ্গার জল দুষিত হচ্ছে।গঙ্গায় কোভিড এ মৃত ব্যক্তির মরদেহ ভাসছে! কিন্তু তবুও আজন্ম সংস্কার লালিত বিশ্বাসী হিন্দুমন গঙ্গার নাম শুনলেই শ্রদ্ধাবনতঃ হয়ে বলে ওঠে –

“ওঁ সদ্য পাতক সংহন্তি সদ্য দুঃখ বিনাশিনী।

সুখদা মোক্ষদা গঙ্গা গঙ্গৈব পরমাং গতি।।”

কারণ হিন্দুর মনোগঙ্গা চির পবিত্র, নিষ্কলুষ এবং “শংকর মৌলিনিবাসিনী” !

গঙ্গা পুজার জলঃ

তাহলে জেনে নেয়া যাক সব দেব দেবীর পূজা হয় গঙ্গা জলে আর গঙ্গাদেবীর পূজা হয় কোন জলে? তাই তো এই প্রবাদ, ‘গঙ্গা জলে গঙ্গা পুজো’।

গঙ্গায় স্নান করলে কি হয় ?

হিন্দু ধর্মে গঙ্গাকে সবচেয়ে পবিত্র নদী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস অনুসারে, গঙ্গা নদীতে স্নান করলে যে কোনও মানুষের সমস্ত পাপ নাশ হয়। বিশ্বাস করা হয় যে গঙ্গার জল কখনও নষ্ট হয় না। গঙ্গা হেমাবতী, জাহ্নবী, মন্দাকিনী, অলকানন্দা, ত্রিপথগা ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

গঙ্গা নদী কোথায় শুরু ও কোথায় শেষ হয়েছে ?

গঙ্গা উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় প্রায় 7010 মিটার উচ্চতায় হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে ভাগীরথী হিসাবে উৎপন্ন হয়েছে এবং ভাগীরথীর পূর্ববর্তী মূল প্রবাহের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে তার প্রবাহ পর্যন্ত প্রায় 2525 কিলোমিটার মোট দৈর্ঘ্যে প্রবাহিত হয়েছে। হুগলি।

আর ও জানুনঃ

গঙ্গা জলকে পবিত্র জল কেন বলা হয় কেন? গঙ্গা জলের ইতিহাস কি ?

রামায়ণ কি ? রামায়ণ এর রচয়িতা এবং রামায়ণ কত প্রকার ও কোন ছন্দে রচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top